টানা দ্বিতীয় বছর চীনের মোট জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির জন্য ভবিষ্যতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক সময় বিশ্বের সর্ববৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ছিল চীন। কিন্তু ২০২২ সালে প্রথমবার চীনের মোট জনসংখ্যা হ্রাস পায় এবং তা প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে কমে যায়। সাত দশকের মধ্যে প্রথমবার দেশটির মোট জনসংখ্যা হ্রাসের ঘটনা ছিল সেটি।
বিবিসি জানায়, বুধবার দেশটির সরকার জনসংখ্যা বিষয়ে নতুন যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সেখানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের শেষে চীনের মোট জনসংখ্যা ১০০ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার। ২০২২ সালের চেয়ে যা ২০ লাখ ৮ হাজার কম।
২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে জনসংখ্যা হ্রাসের পরিমাণ দ্বিগুণ বলেও জানানো হয়েছে।
জন্মহার রেকর্ড পরিমাণ কমে যাওয়া এবং শহুরে শ্রেণীর বিস্তারের কারণে চীনের মোট জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়া অনেকটা প্রত্যাশিত ছিল বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
হংকং ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জনসংখ্যা নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক স্টুয়ার্ট গিয়েটল-বাস্টেন বলেন, “এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের জন্মহার এখন বিশ্বে সর্বনিম্নগুলোর একটি। তাই এমনটা ঘটছে..জনসংখ্যা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে এবং তা এখন হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
“এটা এখন বলতে গেলে বন্ধ হয়ে গেছে..চীনের জনসংখ্যা নতুন একটি যুগে প্রবেশ করতে চলেছে। যেখানে মোট জনসংখ্যা হয় স্থবির হয়ে পড়বে বা হ্রাস পেতে থাকবে।”
বুধবার বেইজিং থেকে আরো জানানো হয়, চীনের জন্মহার এখন প্রতি হাজার জনে মাত্র ৬ দশমিক ৩৯ এরও কম।
টানা দ্বিতীয় বছর হ্রাস পেলো চীনের জনসংখ্যা
অথচ এই চীনই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কঠোরভাবে নিয়েন্ত্রণের জন্য ১৯৮০ এর দশকে চরম বিতর্কিত এক সন্তান নীতি চালু করেছিল। তখন থেকেই দেশটিতে জন্মহার হ্রাস পেতে শুরু করে। কয়েক বছর পর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারেও তার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিম্নমুখী প্রবণতা বিপদজনক পর্যায়ে চলে গেলে ২০১৫ সালে চীন এক সন্তান নীতি তুলে নেয়। সেই সঙ্গে জন্মহার বাড়াতে পরিবার শুরু করার জন্য নগদ অর্থ এবং ভর্তুকি দেওয়া শুরু করে।
২০২১ সালে এসে চীন সরকার তিনটি বা তার বেশি সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম শীথিল করে।
তবে সরকারের এসব চেষ্টা চীনা তরুণদের উপর খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারছে না। বিশেষ করে যারা শহরে বাস করে। জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং কোভিড ১৯ মহামারীর কারণে তিন বছর কঠোর লকডাউনের পর এখন তরুণ-তরুণীরা ক্যারিয়ার গোছাতে অধিক মনযোগ দিচ্ছে।
এমনই একজন বেইজিংয়ে বসবাস করা ৩১ বছরের ওয়াং শেংই। তিনি বলেন, “আমি এবং আমার স্বামী একটি সন্তান চাই। কিন্তু আমরা এখনই তার খরচ বহন করতে সক্ষম নই।”
তিনি বিবিসিকে আরো বলেন, একটি সন্তানের খবর বহন করতে তাকে এবং তার স্বামীকে আরো অন্তত তিন বছর অর্থ সঞ্চয় করতে হবে। বিশেষ করে স্কুলের খরচ মেটাতে।
বলেন, “আমি বয়স কম থাকতেই অন্তঃসত্ত্বা হতে চাই। কারণ, সেটা আমার শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু, আমার কাছে এখন যথেষ্ট অর্থ নেই। তাই আমাকে আপাতত সন্তান জন্মদান স্থগিত রাখতে হচ্ছে। এটা লজ্জার এবং মাঝে মাঝে এটা নিয়ে আমার পাগল পাগল লাগে।”
বুধবার বিশেষজ্ঞরা বলেন, মহামারীর প্রভাবে চীনে শিশু জন্মের হার অনেক হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে মহামারীর কারণে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়া এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে।
চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইবো তেও মানুষ এ বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছে।
এক জন লেখেন, “যদি আপনি মানুষকে আরো সহজ জীবন যাপন দেন, আরো নিরাপত্তার সঙেগ, তবে অবশ্যই আরো অনেক বেশি মানুষ সন্তান জন্মদানে আগ্রহী হবে।”