এক সপ্তাহ পর সড়কে ফিরল ট্রাফিক পুলিশ

জাতীয়

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-সহিংসতার জেরে এক সপ্তাহের মতো রাজধানীর সড়কে ছিল না ট্রাফিক পুলিশ। পুলিশশূন্য রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বাঁশি-লাঠি হাতে এ কয়েকদিন সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ অচলাবস্থার পর আজ সোমবার রাজধানীর সড়কে কাজে ফিরেছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।

আগারগাঁও, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট ও মহাখালীতে ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এক সঙ্গে কাজ করছেন।

সোমবার (১২ আগস্ট) সড়কে ট্রাফিক পুলিশ দেখে অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আগারগাঁওয়ে মেহেদী হাসান নামে একজন পথচারী জানান, সড়কে ট্রাফিক পুলিশ দেখে ভালো লাগছে। আশা করি, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে, পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হবে

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে অনেক পুলিশ সদস্য হতাহত হন। আতঙ্কে বেশিরভাগ থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। সড়ক ছেড়ে যান ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও। এ অবস্থায় রাজধানীসহ সারা দেশের সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব সামলাতে রাস্তায় দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুল শিক্ষার্থীদের।

মাথায় জাতীয় পতাকা, গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালে ঘাম ঝরান শিক্ষার্থীরা। তাদের বাঁশি আর হাতের ইশারায় চলছে নগরের সব যানবাহন। পাশাপাশি সড়কে বাস, মাইক্রো, মোটরসাইকেল ও রিকশার জন্য লেন ভাগ করে দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ চলে। ফলে যেখানে-সেখানে থামতে পারেনি গাড়ি। উল্টো পথে চলার কোনো সুযোগ ছিল না। হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চলাচলও বন্ধ ছিল। লাইন ভেঙে তাড়াহুড়ো করে সামনে যাওয়ার তাড়া ছিল না চালকদের। পথচারীরা রাস্তা পার হন শৃঙ্খলা মেনে। এমন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে।

শহরের কোথাও অকারণে দাঁড়াতে পারেনি কোনো গণপরিবহন। গাড়িগুলোকে চলতে হয়েছে লেন মেনে। যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রীও তুলতে পারেননি চালকরা। বাসচালকদের আজীবনের অভ্যাস এক দিনে বদলে যেতে দেখেছেন নগরবাসী।

শিক্ষার্থীদের এমন কাজে উচ্ছ্বসিত সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে চালকরা বেশি খুশি। অন্যান্য সময় রাস্তায় বের হলেই ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন ঝামেলা করত। গত দু’দিন ধরে সেই ধরনের জটিলতায় পড়তে হয়নি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, একজন ট্রাফিক যেভাবে সড়কে দায়িত্ব পালন করতেন, তারাও চেষ্টা করেছেন। তবে সড়কের নীতিগুলো অনুসরণের বিষয়গুলো দেখছেন তারা। মোটরসাইকেলে দু’জনের বেশি বসতে দেখলে জীবনের ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে অন্তত একজনকে নেমে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।

ছাত্র-জনতা সামাল দেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশ মুখও। মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, হেঁটে যাওয়া উৎসুক সাধারণ মানুষ যে যেভাবে পেরেছেন অচলাবস্থার প্রথম দিকে উঠেছেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতিও পাল্টে গেছে। ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে নিষিদ্ধ সব যানবাহন। মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা উঠতে দেওয়া হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *